চাঁদপুরে বন্যায় ক্ষতি ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল

অনলাইন ডেস্ক : কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী জেলার বানের পানিতে তলিয়ে গেছে চাঁদপুরের কচুয়া, শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ ফসলি জমি। একই সময়ে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ফরিদগঞ্জ, সদর ও হাইমচর উপজেলায় পান, আখ, রোপা আউশ ও আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে জেলার ছয় উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ ২২ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় জেলায় ৪৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মাঠে ফসলের আবাদ ছিল ৩৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে। দণ্ডায়মান ফসল আছে ৩২ হাজার ২৯২ হেক্টর জমিতে। আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমাণ ১২ হাজার ১৪৭ হেক্টর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৭৮৬ হেক্টর।

সরেজমিন বন্যাদুর্গত কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলায় বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রোপা আউশ পানির নিচে তলিয়ে আছে। কিছু মাঠে রোপা আউশ দেখা গেলেও ধানের গোড়া পচে নুয়ে পড়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি আখের আবাদ হয় ফরিদগঞ্জ ও সদর উপজেলায়। দুই উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে ১২৮ হেক্টর জমির আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনের গাঁও গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আখগুলোও নুয়ে পড়েছে। এসব আখ বিক্রি করলেও দাম পাওয়া যাবে না।’

পাশের মানিকরাজ গ্রামের কৃষক রহুল আমিন বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় আমাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন ও বীজতলা। এবছর আর রোপা আমন করা সম্ভব হবে না। কারণ সময় পার হয়ে গেছে।’

ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় উপজেলার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির রোপা আউশ, আমন, আখ, বীজতলা ও অন্যান্য ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে পানি নেমে গেলে তারা বীণা জাতের বিআর-২২ ও ২৩ জাতের ধান আবাদ করেন। কারণ খুব দ্রুত সময়ে এসব ধানের ফলন হয়।’

শাহরাস্তি রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা উনকিলা গ্রামের কৃষক কেরামত আলী। তিনি বলেন, ‘আমার এক একর জমিতে আউশের আবাদ আছে। এখন ধান কর্তনের সময়। কিন্তু সবই শেষ হয়ে গেছে পানিতে।

একই এলাকার দুলাল নামের আরেক কৃষক বলেন, এবছর তিনিও এক একরের বেশি জমিতে রোপা আউশ আবাদ করেছেন। তার জমিগুলোও এখন পানিতে তলিয়ে আছে। গাছের চিহ্নও দেখা যায় না। ঋণের টাকায় জমিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। ফসলের ক্ষতিতে তিনি এখন দিশেহারা।

শাহরাস্তি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার বলেন, উপজেলার বন্যাকবলিত ইউনিয়নের মাঠ জরিপে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে চার হাজার কৃষকের তথ্য পেয়েছি। রোপা আউশসহ বিভিন্ন ফসলে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে হাইমচর উপজেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের পানচাষি আবু তাহের জানান, তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে পানের বরজ করেছেন। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে দুটি বরজ।

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, উপজেলার ১১৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ আছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পান চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন এক হাজার ৭২ কৃষক। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

কথা হয় চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ ছিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের মাঠ জরিপের তথ্যমতে বন্যা ও জলাবদ্ধতায় প্রায় ৪৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত। ফসলের মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাঠে থাকা রোপা আউশ, আখ ও পান। পানিতে তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে আমান ও বীজতলা।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রায় সব উপজেলায় কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে আমনের বীজ, সার ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

Related posts

Leave a Comment